নির্দেশমূলক / সমাজতান্ত্রিক / পরিকল্পিত অর্থনীতি (Command / Socialistic / Planned Economy)
এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে উৎপাদনের উপকরণসমূহের ব্যক্তিগত মালিকানা নেই তবে সামাজিক মালিকানা রয়েছে। উৎপাদিত সম্পদ মানুষের কাজের পরিমাণ ও গুণ অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ও কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্টন করা হয়। এ ব্যবস্থায় পরিকল্পিত অর্থনীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
এখানে রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
জার্মান বংশোদ্ভূত কার্ল মার্কস ও ইংল্যান্ডের অধিবাসী এঙ্গেলস্ এর লেখার মাধ্যমে সমাজতন্ত্রের বিপ্লব জেগে উঠে। এর ফলে রাশিয়ায় লেলিনের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের উত্থান ঘটে। চীনে মাও-সে-তুং এর নেতৃত্বে নির্দেশমূলক অর্থনীতির প্রয়োগ ঘটে।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
উপকরণের ব্যক্তিমালিকানা নেই
মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকে। ব্যক্তির হাতে না।
কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা
উৎপাদন, বন্টন ও উন্নয়নের সকল পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষই নির্ধারন করে।
অবাধ প্রতিযোগীতার অনুপস্থিতি
কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সকল দাম ও মজুরী নির্ধারন করে।
স্বতঃস্ফুর্ত উৎপাদন প্রণালি
সামাজিক মালিকানা থাকায় উৎপাদন গতিশীল হয়।
বন্টনব্যবস্থা
শ্রমিকদের কাজের পরিমাণ ও গুণ অনুযায়ী বন্টনের মাধ্যমে সুষম বন্টন হয়।
ব্যক্তিগত মুনাফা গুরুত্ব পায়না
রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে পণ্য সামগ্রী উৎপাদিত হয়।
যৌথ ও রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান
বৃহৎশিল্প কারখানাসহ অন্যান্য খাতের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে থাকে।
চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণ
ভোক্তার চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণ করা হয় নির্দেশমূলকভাবে।
শ্রমিকদের স্বার্থ
দাম ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে, মজুরি রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত হয়। শ্রমিকদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
শ্রেণী শোষণ অনুপস্থিত
ধনী শ্রেণী, সর্বহারা শ্রেণী, এরূপ বিভেদ থাকে না।
মুদ্রাস্ফীতির অনুপস্থিতি
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারণে মুদ্রাস্ফীতি তেমন হয়না।
সামাজিক নিরাপত্তা
মানুষের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
সামাজিক কল্যাণ
সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যেই উৎপাদন, বিনিময়, বন্টন ও ভোগ পরিচালিত হয়।
বেকারত্ব অনুপস্থিত
বেকারত্বহীনতা সমাজতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা
শ্রেণী বৈষম্য না থাকার কারণে সমাজে শোষণের পরিবেশ তৈরি হয়না।
মিশ্র অর্থনীতি (Mixed Economy)
এই অর্থব্যবস্থা ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে এবং গুণগুলো গ্রহণ করে গড়ে ওঠে।
এল.বি থমাস বলেন “মিশ্র অর্থনীতি হলো এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে বিশুদ্ধ ধনতন্ত্র ও নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির সংমিশ্রন ঘটে। কিছু সম্পদ ব্যক্তিমালিকানায় এবং কিছু রাষ্ট্রীয় মালিকানায় থাকে। এছাড়া অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত কিছু বাজার ব্যবস্থায় এবং কিছু কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করে।
মিশ্র অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য
সরকারি ও বেসরকারি খাতের উপস্থিতি
প্রয়োজনীয়তা ও সমার্থ্য অনুসারে সরকারি ও বেসরকারি খাত তাদের কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ
জনগুরুত্বপূর্ণ খাতসহ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা খাতগুলি সরকারি বিনিয়োগে পরিচালিত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ হয় এবং সরকারের পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
সম্পদের মালিকানা
রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাও স্বীকৃত।
ব্যক্তি স্বাধীনতা
ব্যক্তির স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, প্রভৃতি মৌলিক অধিকারসমূহ স্বীকৃত।
স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা
ধনতন্ত্রের মত এখানেও স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা বিদ্যমান।
মুনাফা
ধনতন্ত্রের মত মুনাফা অর্জন স্বীকৃত। কেননা এই ব্যবস্থাতে ব্যক্তির চিন্তার গুরুত্ব বা স্বাধীনতা আছে।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা
সরকার মূলত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের উন্নয়নকে জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করে।
অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে সরকার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে। কালোবাজারি, মজুদদারী, সিন্ডিকেট, ইত্যাদি প্রতিরোধে সরকার ভুমিকা রাখে।
মুদ্রাস্ফীতির উপস্থিতি
মুনাফা বৃদ্ধিতে সরকার হস্তক্ষেপ করেনা বলে মুদ্রাস্ফীতি বিদ্যমান থাকে।
ভোক্তার সার্বভৌমত্ব
ভোক্তার পছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হয়।তবে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে কখনও কখনও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ
ন্যূনতম মজুরী, কাজের সময়, শ্রম আদালত, ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতা
পেশা নির্বাচন ও অর্থনৈতিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।