L006 ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার তুলনা এবং ইসলামী অর্থব্যবস্থা

ধনতান্ত্রিক ও নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য

পার্থক্যের বিষয় ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থানির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা
সংজ্ঞাধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা হলো এরূপ একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদের মালিকানা, উৎপাদন, ভোগ ও বন্টন পদ্ধতির  ক্ষেত্রে ব্যক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা এরূপ একটি আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন যেখানে উৎপাদনের উপায় সমূহের ব্যক্তিগত মালিকানা নেই। উৎপাদিত সম্পদ মানুষের কাজের পরিমাণ অনুযায়ী বন্টন  করা হয় এবং পরিকল্পিত অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। 
উৎপাদনে ব্যক্তির ভূমিকাঅর্থনীতিতে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যক্তির বা উদ্যোক্তার ভূমিকাকে প্রধান্য দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগেই  উৎপাদন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।
বন্টনধনতন্ত্রে আয় ও সম্পদ বন্টনে বৈষম্য দেখা যায়। সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা থাকায় বন্টন হয় অসম।নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় শ্রমিকদের কাজের পরিমাণ  ও গুণ অনুযায়ী বন্টন পরিচালিত হয়। এ ব্যবস্থায় শোষণ না থাকলেও আয় বন্টনে কিছুটা অসমতা লক্ষ্য করা যায়। 
ভোগভোগ ক্ষেত্রে ভোক্তা স্বাধীন।কী উৎপাদন করা হবে এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্র দিয়ে থাকে।
শ্রেণী -শোষণউপস্থিতশ্রেণী নেই, শোষণও নেই
উপকরণের মালিকানাব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান।রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান। 
সুষম উন্নয়নসাধিত হয় না।সাধিত হয়।
অবাধ প্রতিযোগিতাঅবাধ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। অবাধ প্রতিযোগিতা নেই।
চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণভোক্তার চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণ নেই।ভোক্তার চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান।
পরিকল্পনাগণমুখীঃ নিচের দিক থেকে উপরের দিকে পরিকল্পনা অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা হয়।কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাঃ উপর থেকে নিচের দিকে পরিকল্পনা চাপিয়ে দেয়া হয়।
উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে সম্পর্কসুসম্পর্ক থাকে না।সুসম্পর্ক বিদ্যমান।
মুদ্রাস্ফীতিবর্তমান থাকে।তেমন দেখা যায় না।
বেকারত্ববিদ্যমান থাকে।বিদ্যমান থাকে না।
সামাজিক নিরাপত্তানিরাপত্তা থাকে না।নিরাপত্তা থাকে।

ইসলামি অর্থনীতি (IslamicEconomy)

ইসলামি অর্থনীতি হচ্ছে একটি সামাজিক বিজ্ঞান যা ইসলামের আলোকে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি আলোচনা করে।

তুরুস্কের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড.সাবাহ ইলদীন জাইমের মতে, “ ইসলামি অর্থনীতি বলতে ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা ও তাঁর আচরণের সুসংবদ্ধ বিশ্লেষণ ও অধ্যয়নকে বোঝায়।

ইসলামি অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

ইসলামি শরীয়ত

  এই ব্যবস্থাতে ইসলামি শরীয়ার পূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

হালাল ও হারামের বিধান

  সম্পদ উপার্জন, উৎপাদন ও ভোগ দখলে হালাল ও হারামের বিধান   রয়েছে।

সুদ, ঘুষ ও মজুতদারি রহিতকরণ

  ব্যক্তিজীবনে যে সব বিষয় অতি স্বার্থপরতা, আত্মচিন্তার জন্ম দেয় তা   নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাতে।

সম্পদের বন্টন

  ধনীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করে তা দরিদ্র জনগণের মধ্যে বন্টনের   ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শ্রমনীতির বাস্তবায়ন

  শ্রমিক শোষন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক একই পরিবারের মত।

উত্তরাধিকার আইনের বাস্তবায়ন

  উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির সঙ্গে   সম্বন্ধজনিত দাবিতে মৃতের সম্পত্তিতে অধিকার।

সামাজিক নিরাপত্তা

  সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামি অর্থনীতির সর্বাপেক্ষা আলোচিত ও   গুরুত্বপূর্ণ দিক।

উদ্যোগের স্বাধীনতা

  শরীয়া সম্মত যেকোনও অর্থনৈতিক উদ্যোগের ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে।

স্বয়ংক্রিয় মূল্য ব্যবস্থা

  দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি যেন জনদুর্ভোগের কারণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখে   স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে বাজার পরিচালিত হয়।

জাতীয় আয়ের সুষম বন্টন

  মুসাফির, অন্ধ, অক্ষম ব্যক্তিদেরও জাতীয় আয়ের অংশীদার করা।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহাবস্থান

  সরকারি ও বেসরকারি খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। তবে সকল ক্ষেত্রেই   ইসলামি আইন মেনে চলতে হয়।

ব্যক্তিমালিকানা

  ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত তবে তা নিয়ন্ত্রণমুক্ত নয়। যাকাত ও উশর প্রদান   বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে মালিকানা কুক্ষিগত করতে দেয়া হয় না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *